ঘুম থেকে উঠেই ধড়মড় করে খাটে উঠে বসে আসাদ। আর একটু হলেই দেরি হয়ে গিয়েছিল। গতকালকই ‘দেশের খবর’ পত্রিকার সম্পাদক আজহার উদ্দিন সাহেব তাকে ফোন করে বলেছিলেন যে সকাল ১০ টার মধ্যেই কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে এক খুনের আসামীর সাথে সাক্ষাত করে একটা ‘নিউজ রিপোর্ট’ করতে। এখন বাজে প্রায় সাড়ে ৮ টা। প্রায় ৬ মাস হল পত্রিকাটির ‘ক্রাইম রিপোর্ট’ এ জয়েন করেছে আসাদ। তড়িঘড়ি করে উঠেই ১৫ মিনিটের মধ্যে করিৎকর্মার মত তৈরি হয়ে নেয়। প্রচন্ড ক্ষুধা লাগলেও আজ আর নাস্তা করার সময় নেই। আসামীর সাথে দেখা করে তার কথা রেকর্ড করে এরপর না হয় অফিসে গিয়ে কিছু খেয়ে নেয়া যাবে। দ্রুত হাতে কলম, রাইটিং প্যাড, ভয়েস রেকর্ডার আর মটর সাইকেলের চাবি গুছিয়ে নিয়ে রওনা হয়ে যায় কেন্দ্রীয় কারাগারের দিকে।
সম্পাদক আজহার সাহেব বেশ করিৎকর্মা লোক। আগেই পাস যোগাড় করে রেখেছিলেন। পরিচয় পাওয়া মাত্রই তাকে একজন পুলিশ কন্সটেবল তাকে ভিতরে নিয়ে বসতে দেয়। এর কিছুক্ষণ পরেই তাকে অন্য একজন অফিসার এসে বলে, আমার সাথে আসুন। এরপর কারাগারের অনেক অলিগলি ঘুরিয়ে তাকে নিয়ে যায় যেখানে আসামীকে রাখা হয়েছে। ঘরটা একটু অন্যরকম। এটা মনে হয় ইন্টারোগেশন সেল হবে। এর আগে অনেক ক্রাইম রিপোর্ট করলেও কোন জেলখানায় এসে রিপোর্ট করার অভিজ্ঞতা আসাদের এই প্রথম। জেল খানায় ঢোকার পর থেকেই কেমন যেন একটা গা ছমছমে অনুভুতি কাজ করছে। মেরুদন্ডের কাছে একটা শিরশিরে ভাব বোধ হচ্ছে। নিজেকে সান্ত্বনা দেয়, একটু পরেই খোলা হাওয়া খেতে পারবে বৎস। এত চিন্তা করো না।
-মজার কথা কি জানেন? পুলিশ অফিসার শফিকুর রহমান আসাদকে প্রশ্ন করে।
-না জানি না। কি বলুন।
-খুন করার সময় কেউ দেখে নাই। এমনকি কোন যুৎসই প্রমাণ ও ছিল না। আসামী নিজেই থানায় এসে ধরা দেয়। আর ধরা দেয়ার পর থেকেই সে বারবার কোন একজন সাংবাদিকের সাথে কথা বলতে চায়। জবানবন্দী দেয়ার সময়ও বারবার একই কথা বলে।
-তাই নাকি? আসাদ অবাক হয়। মানুষ অপরাধ করে লুকাতে চেষ্টা করে আর এই আসামী নিজে ধরা দিলো! ইন্টারেস্টিং।
-আরো ইন্টারেস্টিং ব্যাপার আছে। খুনী একজন স্কুল শিক্ষক আর খুন হয়েছেন একজন স্বনামধন্য খ্রীস্টান পুরোহিত ফাদার অনিন্দ্য গোমেজ।
-বলেন কি? দুইদিন আগে পত্রিকায় যেই খুনের ঘটনা নিয়ে এত আলোড়ন সেই ফাদার অনিন্দ্য গোমেজ? যাকে অত্যন্ত ভয়ানক ভাবে এসিড দিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়? বলতে বলতে আসাদের মনের মধ্যে একটা বীভৎস লাশের ছবি ভেসে উঠলো। দুই দিন আগের পত্রিকায় দেখা।
-ঠিকই বলেছেন।
কথা বলতে বলতে নির্দিষ্ট ঘরের সামনে এসে দরজা খুলে শফিক সাহেব আসাদকে বলে, ভেতরে আসুন।
ঘরে ঢুকে আসাদ দেখে দরজার দিয়ে পিঠ দিয়ে একটা চেয়ারে আসামী বসা। তার সামনে আরো কয়েকটা চেয়ার। একটা চেয়ারে একজন পুলিশ কন্সটেবল বসা আসামীর সামনে। খুনের আসামীকে অনেক সময় ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে রাখা হয় জানত আসাদ। কিন্তু এখানে ব্যতিক্রম দেখা গেল। পেছন থেকে দেখেই বোঝা যায় যে আসামি হ্যাংলা পাতলা গড়নের। মাথা নিচু করে বসে আছে। গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামলা। পরনে সাদাকালো ডোরাকাটা পোষাক যেমনটি আসামীদের পরানো হয়।
এখানে বসুন বলে শফিক সাহেব আসাদের দিকে একটা চেয়ার এগিয়ে দেয়।
বসার সময় আসামির দিকে দোখ পড়া মাত্রই আসাদ তড়াক করে লাফিয়ে উঠে বিস্ফোরিত চোখে।
-একি তপনদা তুমি?
-আরে আসাদ তুই! তুই আসবি আমি তো তা ভাবতেই পারিনি রে ভাই। যাক ভালই হল। ইশ্বরের কৃপায় মনে হয় আমার মনের আশা পূর্ণ হবে। তুই অন্তত আমার কথাগুলো বুঝতে পারবি আর ঠিক মত মানুষকে জানিয়ে দিতে পারবি।
-তপনদা আমি তো মানতেই পারছিনা যে আমি তোমাকে এইভাবে দেখব।
-আপনারা একে অন্যকে চেনেন নাকি? শফিক সাহেব পাশে বসে প্রশ্ন করেন।
-তা চিনি বৈকি! উদ্ভ্রান্তের মত আসাদ বলে ওঠে। তপনদা আমার অনেক কাছের মানুষ। আমার দুর্দিনের সাথী। আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না যে আমি উনাকে এইভাবে দেখব।
-ধুর পাগল। তোকে দেখে আমার অনেক ভাল লাগছে রে। কতদিন পরে তোকে দেখলাম। তুইও তো আর দেখা করলি না রে?
-সে হবে দাদা। আমি আমার কথা না হয় পরে তোমাকে বলে যাব। কিন্তু আমি তোমার কথা পুরো শুনতে চাই। কি হয়েছিল যে তুমি খুনের আসামী হতে গেলে?
-বলব রে। সবই বলব। আমার ভাল লাগছে এই ভেবে যে আমি আমার কথাগুলা তোকে বলে যেতে পারছি। আমার মনে আর কোন কষ্ট থাকবে না যদিও আমার ফাঁসি হয়ে যায় না কেন। আমি এখন আর কোন কিছুর পরওয়া করি না। ধীরে ধীরে কথাগুলো বলে গেল চেয়ারে হাত বাঁধা অবস্থায় বসে থাকা ফাঁসির আসামী।
দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা একজন কন্সটেবল কে ইশারা করে আসামীর হাতের বাঁধন খুলে দিতে বলল অফিসার শফির সাহেব।
-কি ব্যাপার হাত খুলে দিচ্ছেন যে? আমি তো পালিয়ে যেতেও পারি। হাসি হাসি মুখ করে একটু কৌতুক করেই কথা গুলো বলে গেল তপন।
-জানি আপনি সেটা করবেন না। যদি করবেন এ তাহলে নিজে থেকে আমাদের কাছে এসে ধরা দিতেন না। আসামী নিয়ে আমাদের কাজ। আমরা মানুষ চিনি। আপনি আপনার কথা শুরু করুন। আসাদ সাহেব নোট করে নিক। পরে না হয় প্রতিবেদন প্রকাশ করা যাবে।
আসাদ তার ভয়েস রেকর্ডার অন করে তপনের গলার কাছে ঝুলিয়ে দিলো। এরপর সে বলতে শুরু করলো তার খুনের আসামী হবার বৃত্তান্ত।
…………………………………
তখন আমার বয়স অনেক কম। মাত্র সাত কি আট হবে। বাবাকে দেখি নাই। উনি যখন মারা যান তখন আমি অনেক ছোট। ভাই বোন বলতে কেউ ছিল না। মায়ের কাছে শুনেছিলাম যে আমার বড় এক বোন ছিল। আমার জন্মের আগে সেও মারা যায়। মা আর আমি এই ছিল আমাদের দুইজনের সংসার। সুখ কাকে বলে সেটা কখনও বুঝি নাই। অভাবের সংসার ছিল। মা মানুষের বাসায় কাজ করত। মা ছেলের দিন কোনভাবে কেটে যেত। ক্ষুধা ছিল আমাদের নিত্য সঙ্গী। অভাবের দিনে একটু পেট ভরে খেতে পাওয়াটাই ছিল আমার কাছে অনেক বড় একটা স্বপ্নের মত। আমার কাছে মনে হত সুখ মনে হয় ক্ষুধা না থাকাকেই বলে। এতই গরীব ছিলাম যে লেখাপড়ার জন্য মা আমাকে কোন স্কুলেও দিতে পারে নাই। ক্ষুধার অন্ন যেখানে জোটে না সেখানে স্কুলে যাওয়াটা একটা বিলাসিতা’র মত মনে হত তখন। এমন অনেক দিন আর রাত কেটে গেছে আমাদের দুইজনের যে খাওয়ার মত কিছু ছিল না। মা ছেলে কত রাত উপোস করে কাটিয়েছি তার ইয়ত্তা নেই। ক্ষুধার জ্বালায় সারারাত ছটফট করে কাটাতাম। কিছুই করার ছিল না। তখন মনে হত আমাদের মত গরীবদের জন্য মনে হয় কোন ইশ্বর নেই। ইশ্বর শুধু বড় লোকদের জন্য। এমনি করেই দিন কোনমতে ছলে যাচ্ছিল। এমন সময় একদিন মা আমাকে বলল, স্কুলে পড়বি? মহা উৎসাহের সাথে বললাম, পড়ব।
আমাদের গ্রাম থেকে প্রায় মাইল পঞ্চাশ বা তারও কিছু বেশী দূরে ছিল একটা খ্রিস্টান মিশনারি স্কুল আর হোস্টেল। ফাদার অনিন্দ্য গোমেজ ছিল ঐ মিশনারি’র প্রধান। আমার মা জানতে পেরেছিলেন যে ওখানে গরীব খ্রিস্টান ছেলেরা বিনা পয়সায় পড়তে পারে আর থাকা খাওয়ারও ব্যবস্থা আছে। বিনিময় ওখানে কিছু কাজ করে দিতে হয়। দিনে কাজ আর রাতে স্কুলে লেখাপড়া। সেই সাথে এক-আধপেট খাওয়া। মা কে জানালাম, আমার খাওয়ার দরকার নেই। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না। মা অভয় দিয়ে বলেছিলেন, মাসে একবার করে করে আমাকে দেখে আসবেন। আর যাওয়ার সময় আমার জন্য অনেক খাবার রান্না করে নিয়ে যাবেন। মা আমাকে অনেক বোঝাতে লাগলেন যেন আমি লেখাপড়া করে অনেক বড় হই। তখন আমাদের বড় একটা বাড়ি হবে। আমাদের কোন অভাব থাকবে না। আমরা অনেক ভাল ভাল খাবার খেতে পারব। আমাদের আর ক্ষুধার কষ্ট থাকবে না। একসময় আমি মায়ের কথায় মিশনারি হোস্টেলে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে গেলাম। মা আমাকে নিয়ে রেখে এলেন। চলে আসার সময় নিজে চোখের পানি ফেলতে লাগলেন আর আমাকে সান্ত্বনা দিতে লাগলেন যে কয়দিন পরেই আবার এসে আমাকে দেখে যাবেন। আমি মা কে বলে দিলাম, পরের বার আসার সময় উত্তর দিকের বেল গাছ থেকে আমার জন্য একটা বেল নিয়ে আসতে। মা আমাকে ফাদার অনিন্দ্য’র হাতে তুলে দিয়ে চলে এলেন। শুরু হল আমার জীবনের সেই অন্ধকার অধ্যায়।
হোস্টেলে আমার মত আর অনেকগুলো ছেলেকে দেখতে পেলাম। সবাই কোন না কোন কাজ করছিল। কেউ গাছে পানি দেয়। কেউ চারা গাছ লাগায়। কেউ ঘাস পরিস্কার করে। আমি বুঝতে পারছিলাম না আমাকে কোন কাজ দেয়া হবে। যাই হোক মা’র কথা মনে করে বার বার চোখে পানি এসে যাচ্ছিল। শুধু মনে হচ্ছিল মা কি খাবে? মা আমাকে ছাড়া কিভাবে থাকবে? এক লোক এসে আমাকে একটা ঘরে নিয়ে গেল। দেখলাম মেঝেতে মাদুর পাতা আছে। বুঝলাম এখানেই ছেলেগুলা ঘুমায়। আমি ঘরের একটা কোনা দেখে আমার কাপড়ের ছোট্ট পুটলিটা রেখে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। তখন থেকেই আমার অরুপ নামে একটা ছেলের সাথে বন্ধুত্ব হয়। ছেলেটা আমার চাইতে একটু বড় ছিল।
রাতে অন্যদের সাথে আমিও ক্লাসরুমে গেলাম। ওখানে ফাদার অনিন্দ্য ক্লাস নেন। প্রথমে বাইবেল থেকে পাঠ করে শোনান এরপর অন্যান্য লেখাপড়া শেখাতেন। আরো কয়েকজন শিক্ষক ছিল। তারা সবাই মিশনারির সাথে যুক্ত ছিল। রাতে ফাদার ক্লাসে আসলেন। লম্বা সাদা রঙের আলখাল্লা পরা। গলায় বড় একটা রুপালি রঙের ক্রুশ ঝোলানো। অবাক হয়ে ফাদারকে দেখলাম। এত সুন্দর পুরুষ মানুষ আমি তো আমাদের গ্রামে কখনও দেখি নাই। ফাদারকে দেখলেই প্রথমে সিনেমার নায়কের কথা মনে হতে পারে। ক্লাসে উনি যখন পড়াতেন তখন এক ধরনের মাদকতা মেশানো থাকত উনার পড়ানোর ভঙ্গিতে। খুব মন দিয়ে শুনতাম উনার কথাগুলা। অচিরেই আমাদের প্রিয় শিক্ষকে পরিণত হন ফাদার অনিন্দ্য। অনেক সুদর্শন মানুষ ছিলেন। পরে অবশ্য এই সৌন্দর্যের আড়ালের কদর্যতা বুঝতে পেরেছিলাম।
আমার বন্ধু অরুপ আমাকে কয়েকবার কি যেন বলতে গিয়েও বলতে পারে নাই। ওর ভেতর কেমন যেন একটা জড়তা কাজ করতে দেখতাম। আমি অনেকবার চাপাচাপি করেও ওর মুখ খোলাতে পারি নাই। অনেক অনুরোধ করেছি কিন্তু বলে নাই। মাঝে মাঝে আমি ওকে একা একা কাঁদতে দেখতাম। আমার অনেক খারাপ লাগত। মিশনারিতে আমি আর অরুপ এক সাথে থাকতাম বেশির ভাগ সময়। ক্লাসের সময় দেখতাম ফাদার অনিন্দ্যর ক্লাসে অরুপ প্রায়ই থাকত না। উনার কাছাকাছিও যেতে চাইতো না। অরুপের এই আচরণ আমার কাছে বরাবরই একটা রহস্যের মত ছিল।এরপর আমার জীবনেও নেমে আসল কালো অধ্যায়। অরুপের সেদিনের কষ্টের কথা আমার চাইতে এখন ভাল আর কেউ বোঝে না। অনেক মায়া হয় আমার ওর জন্য। একদিন মিশনারির পাশের দীঘিতে অরুপের লাশ ভাসতে দেখি আমি। শীতের সময় ছিল। সারা শরীর কালো হয়ে গিয়েছিল। কেন আত্মহত্যা করলো তখন বুঝতে পারি নাই। অনেক কেঁদেছিলাম ওর জন্য। ফাদার নিজের হাতে অরুপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষ করলেন। আমাদের কে বোঝালেন যে অরুপ এখন থেকে পরম ইশ্বরের সাথে মিলিত হবে। আসল রহস্য অগোচরেই থেকে গেল।
দুই মাস হয়ে গেল। মায়ের আর দেখা পেলাম না। মা আর এল না। অনেক কান্নাকাটি করেছি। কিন্তু লাভ কি? মা আর আসে না। সেই থেকে আমি আর মায়ের দেখা পাই নি। বড় হয়ে যে মাকে খুঁজি নাই তা নয়। আমার ধারণা ছিল মা হয় হারিয়ে গেছে না হয় মারা গেছে। না হলে আমাকে দেখতে আসে না কেন? আমার ধারণা অবশ্য ভুল প্রমাণিত হয়। আমার মা বেঁচে ছিলেন। আমি একবার তার দেখা পেয়েছিলাম। পরিচয় দেই নি বা আমিও তার কাছে যেতে চেষ্টা করি নি। কিন্তু সে কথা থাক। অনেকদিনের পুরানো কথা।
অরুপের মৃত্যুর পরে মিশনারিতে আমাদের ব্যাপারে অনেক কড়াকরি আরোপ করলেন ফাদার অনিন্দ্য। আমাদের কাউকে বাইরে যেতে দেয়া হত না। চারিদিকে বেড়া লাগিয়ে দিলেন। দরজায় দারোয়ান থাকত সবসময়। অনেকটা জেলখানার মত মনে হত তখন। কিন্তু খুব একটা খারাপ লাগত যে তা বলব না। সময় মত একটু খেতে তো পারছিলাম। ক্ষুধার জ্বালা অনেক বড় জ্বালা। ধরাবাঁধা নিয়মে চলে যাচ্ছিল আমাদের দিনকাল।
একদিন ক্লাসের পরে ফাদার অনিন্দ্য আমাকে নিয়ে গেলেন উনার সাথে। বললেন আজকে উনার সাথে বাইরে যেতে হবে। আমি সানন্দে রাজি হলাম। কারণ উনার একটু সান্নিধ্য পাওয়া আমার কাছে তখন অনেক বড় ব্যাপারই ছিল। মিশনারি’র পাশেই ফাদারের ঘর ছিল। দোতালার উপরে। উনি আমাকে বললেন যে এখন থেকে আমাকে উনার ঘরে কিছু কাজ করে দিতে হবে। আমি সানন্দে রাজি হয়ে গেলাম। ঘর পরিষ্কার করে ঘর মুছে দিলাম। বইগুলা তাকে গুছিয়ে দিলাম। কাজ শেষ করতে করতে রাত হয়ে গেল। আমি মিশনারিতে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুমতি চাইলাম। ফাদার বললেন আমি আজ উনার ঘরেই থাকতে পারি। কোন অসুবিধা নাই। মনের ভেতর কেমন যেন একটা অবিমিশ্র অনুভুতি হল। আবার ফাদার কে না বলব সেই সাহসও হল না। রাত হয়ে গেল। তখনকার দিনে তো ওখানে আর কারেন্ট ছিল না। রাতের বেলা হারিকেন এর আলোই ছিল সম্বল। আমি মেঝতে পাটি বিছিয়ে শুয়ে পড়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম। ফাদার বললেন আমাকে উনার খাটে শুতে। শীতে শেষ হয়ে তখন গরম পড়ে গিয়েছে। আমি জড়সড় হয়ে ফাদারের খাটের কিনারে গিয়ে বসলাম। ফাদার আমার কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে আমাকে আদর করতে লাগলেন। উনাদের আদরের বিষাক্ততা তখনো টের পাই নি। আমাকে অনেক সান্ত্বনা দিলেন যে আমার মায়ের সাথে আমার দেখা হবে। আমি অনেক বড় হব এইসব আরো কত কিছু।
আমাকে আদর করতে করতে ফাদার উনার গায়ের আলখাল্লা খুলে ফেললেন। তার পরনে তখন ছোট একটা প্যান্ট ছিল মাত্র। অন্ধকারেও উনার গায়ের সবকিছুই খুব ভালমত বোঝা যেত। আমার খুব লজ্জা করছিল। কিন্তু আমি তখন ফাদারের দুই হাতের খেলার পুতুল মাত্র। আমার পুরা শরীর উনার হাতের মধ্যে পিষ্ট হতে লাগল। উনার চুম্বন আর আদরের আতিশয্যে আমি মুহুর্তে অতিষ্ট হয়ে গেলাম। কিন্তু বাঁধা দিতে পারছিলাম না। আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না যে কি হতে চলেছে। না এগুলা কারো কাছে শুনেছি না কখনো দেখেছি। উনি আমাকে সম্পূর্ণ নগ্ন করে ফেললেন। ওই মুহুর্তে আমি মনে হয় আমার সমগ্র অনুভুতি হারিয়ে ফেলেছিলাম। এরপর আমার সারা গায়ে চুম্বন করতে লাগলেন। প্রচন্ড অসহায় লাগল নিজেকে। মনে মনে ইশ্বরের নামের আগে মায়ের কথা মনে হতে লাগল। মনে মনে বলছিলাম, ‘মা আমি এখানে আর থাকব না। তুমি আমাকে নিয়ে যাও মা। আমি আর ক্ষুধা লাগলে কিছু খেতে চাইব না। তুমি আমাকে নিয়ে যাও মা। আমি তোমার কাছে থাকব’। আমার আর্তনাদ আমার বুকের ভেতরেই বাড়ি খেয়ে ফিরে গেল। কিছুক্ষন পরে দেখলাম ফাদার নিজে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে আমার আমার পাশে রয়েছে। জোর করে উনার উত্থিত শিশ্ন আমাকে লেহন করতে বলল। আমি বমি করে ঘর ভাসিয়ে দিলাম। তাতেও ফাদারের হাত থেকে রেহাই পেলাম না। এরপরের কথা আমি আর বিস্তারিত বলতে চাই না। ব্যথায় বারবার চিৎকার করে উঠলেও কোন লাভ নেই। আমার আর্তনাদ শোনার মত কেউ নেই সেখানে। কিছুক্ষণ পরে নিজেকে আবিষ্কার করলাম খাটের উপরে আধমরা উপুড় হয়ে শোয়া, রক্তাক্ত। সারা শরীরে ব্যথা। নড়তেও পারছিলাম না। ফাদার সান্ত্বনা দিলেন। এটা কিছু না। ঠিক হয়ে যাবে। এরপর থেকে আর কষ্ট হবে না। আমি আমার সব ভাষা হারিয়ে ফেলে মরার মত পড়ে থাকলাম।
পরদিন আমি সারাদিন ঘর থেকে বের হলাম না। আমার মনে হতে লাগল অরুপের মত আমাকেও মরে যেতে হবে। ঐ ছোট বয়সেও আমার বুঝতে বাকী রইলোনা যে আমার উপর দিয়ে কি প্রলয়ঙ্করী ঝড় বয়ে গেছে। পায়ুপথের মত আমার মনটাও রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত হয়ে চৌচির হয়ে গিয়েছে। হাটতে পারছিলাম না। বসতেও পারছিলাম না। লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছিল। কেউ আমাকে কিছু বলছিলনা। আমার খোঁজ খবর নেবার মতও কেউ ছিল না। বারবার মনে হতে লাগল আমি কিভাবে চলে যেতে পারি এখান থেকে? লাগবে না আমার লেখাপড়া করা। চোখ ফেঁটে কান্না পেয়ে গেল। মা কে মনে মনে অনেক গালাগাল দিলাম আমাকে এখানে রেখে যাবার জন্য। আমার ছোট্ট জীবনটা নরকের মত মনে হতে লাগল।
আসাদের দিকে তাকিয়ে তপন বলল, আজ এখন অবশ্য আমার আর লজ্জা নেই। আমি মুখ ফুঁটে সব কথা বলছি। আমার মন আজ অনেক হাল্কা লাগছে বুঝলি আসাদ। আজ আর নিজের মধ্যে কোন গ্লানি নেই। নিজেকে অনেক মুক্ত মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে একটু বুক ভরে শ্বাস নিতে পারছি।
-কিন্তু এরপর কি হল তপনদা। হতবিহ্বল আসাদ প্রশ্ন করে।
তপন খেয়াল করল আসাদ তার দুই হাতের মুঠি শক্ত করে বসে আছে। ওর দিকে তাকিয়ে বলল, তোর আবার কি হল রে? তুই এমন করছিস কেন? আরাম করে বস। খুনের আসামীর রিপোর্ট নিতে এসেছিস, নে। ভালো মত রিপোর্ট করিস রে দাদা। তোর দাদার কষ্টের কথা সবাইকে তুই জানিয়ে দে। এরপর আমার মরতে হলেও আমার কোন কষ্ট নাই রে। আজকে আমি অনেক সুখী মানুষ। আজকে আমার আর ক্ষুধা’র অনুভুতিও কাজ করে না।
-এভাবে বলো কেন তপনদা। এতদিন তোমার সাথে ছিলাম। কোনদিন তুমি আমাকে এইসব বল নাই।
-ধুর পাগল। আমি আমার কষ্টের কথা কাউকে বলতে চাই না যে। আজ বললাম। কারণ না বললে অনেকের মত তুইও হয়ত অন্ধকারে থেকে যেতি।
-তোমার কিছু হবে না তপনদা। তুমি চিন্তা করো না।
-আমার আবার চিন্তা কি রে? চিন্তা করা বাদ দিয়েছি সেই কবে থেকে। ওসব নিয়ে ভাবি না। কে আছে আমার যে তাকে নিয়ে চিন্তা করবো?
-বিয়ে থা কেন করলে না? কেন তুমি একটা স্বাভাবিক জীবনে থাকলে না দাদা?
সত্যি কথা বলতে কি রে, মিশনারির ওই ঘটনার পরে নিজের জীবনের প্রতি আমার ঘেন্না ধরে গেছিল। স্বপ্নের মধ্যেও ফাদার অনিন্দ্য আমাকে কুরে কুরে খেত। আমার মন মননে সমকামিতার জঘন্য বীজ লোকটা বপন করে দিয়েছিল। যার বিষাক্ত ছোবল থেকে আমি মুক্তি পাই নি কখনই।
-এরপর কি হয়েছিলে তা কিন্তু বললেন না। এতক্ষণ পরে শফিক সাহেব প্রশ্ন করলেন।
-বলছি শুনুন তাহলে।
এরপর থেকে দিনের পর দিন মাসের পর মাস আমার সাথে ঐ একই ঘটনা চালাতে লাগলেন ফাদার। শুধু আমি না, মিশনারির অনেকগুলো ছেলেই এই ঘটনার স্বীকার ছিল। অরুপ কেন আত্মহত্যা করল আশাকরি আপনার বুঝতে পারছেন। ও মেনে নিতে পারে নাই। নিজের জীবন শেষ করে দিয়েছে। আমি পরে ফাদারের চরিত্রের অনেক দিক সম্পর্কে জানতে পারি। সে নিজেই আমাকে বলত এইসব কথা। মিশনারি থেকে একটু দূরে একটা মুদি দোকান চালাতো এক অল্পবয়স্ক হিন্দু বিধবা মেয়ে। ঐ মেয়ের সাথেও ফাদারের নিয়মিত শারীরিক সম্পর্ক হত। বার দুয়েক গর্ভাপাতও ঘটিয়েছে। কিন্তু নারী শরীরের চাইতে ছোট ছোট ছেলেদের প্রতিই তার অমোঘ আকর্ষণ ছিল। নারী দেহ সে ভোগ করতো শুধু একটু রুচি বদলের জন্য মাত্র।
এরপরে আমি বছর খানেক পরে মিশনারি থেকে পালিয়ে আসি। শুরু হয় আমার জীবনের আর এক নতুন অধ্যায়। আমি সে সব প্রসঙ্গে আর যাচ্ছি না। আমার জীবনের ইতিহাস শুনিয়ে আমি কাউকে অযথা বিরক্ত করতে চাই না। অনেক চড়াই উতরাই পার হয়ে লেখাপড়া করে বড় হয়ে শিক্ষকতায় ঢুকি। এর মধ্যে পার হয়ে যায় প্রায় ২৫ টি বছর। কিন্তু নিজের মনে জ্বলতে থাকা আগুনকে আমি নেভাতে পারিনি। মিশনারি থেকে পালানোর সময় পণ করে নেই আমাকে খুন করতেই হবে। যে করেই হোক ফাদার অনিন্দ্য কে আমি খুন করবো। কিন্তু আমি জানতাম না কিভাবে সম্ভব হবে। এরপর অনেক দিন অনেক চেষ্টা করেও আমি উনার ঠিকানা আর বের করতে পারি নাই। বহু বছর পরে একবার আবার ঐ গ্রামে বিয়ে খোঁজ নিয়েও কোন লাভ হল না। পেলাম না উনার দেখা। মনে মনে ইশ্বর কে ধিক্কার দিলাম। আমি আমার পণ থেকে পিছপা হইনি কখনও।
এরপর একদিন ইশ্বরের দয়া হল। ঐদিন মনে হল ইশ্বর বলে আসলেই কেউ একজন আছেন। আমি যেই স্কুলে পড়াতাম ওখানে একদিন ঠিক হল বড়দিনে উৎসবের আয়োজন করবে। হেডমাষ্টার সাহেব জানালেন বিশেষ অতিথি আসবেন। উনি ‘শিশু অধিকার’ এর উপরে বক্তব্য দেবেন। আমি জানতে চাইলাম প্রধান অতিথি কে হবেন? বললেন, আর্চবিশপ ফাদার অনিন্দ্য গমেজ সি.এস.সি.। আমার মনে হল কয়েক হাজার ওয়াটের বাতি জ্বালিয়ে কেউ মনে হয় আমার শরীর জ্বালিয়ে দিল। মনে মনে ইশ্বরকে ধন্যবাদ দিলাম। শুনে নিলাম বিস্তারিত ভাবে। অতিথি কই থাকবেন, কি কি প্রোগ্রাম ইত্যাদি। আমি আমার প্ল্যানিং শুরু করে দিলাম। ভয়ংকর যন্ত্রণার মৃত্যু দিতে চাইলাম ফাদারকে। জানতে পারলাম আমাদের স্কুলের পাশের উপজেলা গেস্ট হাউসে থাকবেন ফাদার অনিন্দ্য। সুযোগ আমার হাতের মুঠোয় এসে গেল। নিজের সৌভাগ্যকে নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।
অনুষ্ঠানের দিন আমি ছিলাম না। আমি গেষ্ট হাউসে গিয়ে লুকিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। রাতে হেডমাষ্টার নিজে ফাদার কে এগিয়ে দিয়ে গেলেন উনার কামরায়। আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন সবাই চলে যাবে। আগত সবাই চলে যাওয়ার পরে আমি আস্তে আস্তে ফাদারের কামরার দিকে এগিয়ে যাই। দরজার নক করার পরে ফাদার দরজা খুলে দেন। খালি গায়ে পরনে শুধু একটা নেংটি মতন পরা ছিলেন। আমি বললাম ফাদার আমি আপনার সেবা যত্নের জন্য এসেছি। হেডমাষ্টার সাহেব পাঁঠিয়েছেন। ফাদাব বললেন, কই উনি তো তোমার কথা আমাকে কিছু বলেন নি। আমি তৎক্ষণাৎ চাদরের ভেতর থেকে শিশিতে করে আনা ক্লোরোফর্মের বোতল থেকে রুমালে একটু মাখিয়ে পেছন থেকে ফাদারের নাকে ঠেসে ধরি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই উনি অজ্ঞান হয়ে আমার হাতের মধ্যে এসে পড়েন। আমি আমার হাতের ব্যাগটাকে ঘরের কোনায় রেখে দ্রুত ফাদারকে খাটে নিয়ে শুইয়ে রশি দিয়ে হাত পা শক্ত করে খাটের সাথে বেঁধে ফেলি। মুখ শক্ত করে একটা গামছা দিয়ে পেঁচিয়ে রাখি যেন শব্দ করতে না পারে। এরপর অপেক্ষার পালা। কখন উনার জ্ঞান ফিরে। আমি একটা চেয়ার টেনে নিয়ে উনার মুখে পানির ছিটা দিতে লাগলাম।
প্রায় আধাঘন্টা পরে গো গো শব্দ করতে করতে উনার জ্ঞান ফিরে। আমার দিকে বিস্ফোরিত চোখে চেয়ে থাকে। উনার জ্ঞান ফেরার পরে আমি উনাকে খাটের উপরে নগ্ন করে ফেলি। চুপচাপ দেখা ছাড়া উনার কিছুই করার ছিল না। এরপর আমি আমার পরিচয় দিলাম। সাথে সাথে এও বললাম কিভাবে আমি এখন তাকে খুন করব! মুখে কোন শব্দ করতে পারে নাই, কেবল গোঙ্গানির মত একটু আওয়াজ বের হল মাত্র। চোখে মুখে ফুঁটে উঠল বাঁচার আকুল তৃষ্ণা। আমি বললাম, আজকে আমি আমার আর অরুপের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেব। ল্যাবরেটরি থেকে আনা গাঢ় ধুমায়মান সালফিউরিক এসিডের বোতল বের করে ফাদারকে দেখিয়ে বললাম, অরুপকে যেভাবে মেরেছিলি আজকে আমিও তোকে ওইভাবেই মারব। একটু একটু করে ফোঁটা ফোঁটা এসিড আমি ফাদারের শিশ্ন আর অন্ডকোষের উপরে ঢালতে লাগলাম। চামড়া এসিডে পুড়ে যাবার বীভৎস দৃশ্য নিজেই দেখলাম। গন্ধে আমার বমি চলে এল। ফাদারের হাত পা বাঁধা শরীর ভীষণ ভাবে কাঁপতে কাঁপতে অচেতনের মত হয়ে গেল। এরপর আমি ফাদারের মুখ থেকে গামছা খুলে দিলাম। ডাঙ্গায় তোলা মাছের মত খাবি খেতে লাগল অবর্ণনীয় যন্ত্রণায়। আমি অনেকটা এসিড এরপর পানির মত উনার মুখে ঢেলে দিলাম। মুহুর্তের মধ্যে সারা গালের ভেতর পুড়ে দগদগে হয়ে গেল। এবার ফাদার নিথর হয়ে গেলেন। আমি উনার নাকের ছিদ্রের ভেতর আর দুই চোখের ভেতর এসিড ঢেলে উনার পুরো মুখমন্ডল কে জ্বালিয়ে দিলাম। হাতের স্পন্দন ধরে কিছুক্ষণের মধ্যে টের পেলাম ফাদার মারা গেছেন। আমি উনার হাত পায়ের বাঁধন খুলে এমনভাবে শুইয়ে দিলাম যেন আরাম করে ঘুমাচ্ছেন। গায়ে একটা কম্বল টেনে দিলাম। এরপর গভীর রাতে ঘর খুলে বেরিয়ে আসি। এরপরের ঘটনা আপনাদের সবার জানা আছে। দুই দিন পর ভোর বেলা ঢাকা চলে আসি। এসে নিজেই থানায় ধরা দেই। আর অনুরোধ করি যেন কোন সাংবাদিক কে আমার কথাগুলা নোট করতে দেয়া হয়। শফিক সাহেবের কাছে আমি কৃতজ্ঞ আমার অনুরোধ রাখার জন্য।
-তুই কিন্তু আমার কথাগুলা দেশের মানুষকে জানিয়ে দিস ভাই। মরেও শান্তি পাব। সবাই জানুক পোশাকী ভালমানুষীর আড়ালে কত নোংরা পশু লুকিয়ে থাকে। আসাদের দিকে তাকিয়ে শেষ কথাগুলা জানাল আসামী তপন।
..............................
কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের হয়ে নিজের মটর সাইকেলের কাছে আসতেও আসাদের মনে হল যেন কত বছর পার হয়ে গেল। পা চলতে চাইছিল না। দুই হাত শক্ত করে মুঠ করা। ঠোঁটের সাথে ঠোঁট শক্ত করে চেপে ধরা। কপাল থেকে সরু ঘামের রেখা মুখের উপরে গড়িয়ে পড়ছে। রোদের আলো লেগে চকচক করছে। এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন চোখের সামনে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। দাঁতের সাথে দাঁত এমন ভাবে চেপে আছে যে একটু পরে দুই চোয়াল ব্যথা করতে লাগল। মটর সাইকেলে উঠে এত জোরে কিক মারলো যে আর একটু হলে পা ছিঁটকে রাস্তায় গিয়ে লাগত।
অফিসের দিকে যেতে যেতে আসাদ ফিরে গেল তার ছোটবেলার গ্রামের বাড়ির কাছারি ঘরে। যেখানে ওর লজিং টিচার হাফিজুর রহমান থাকতেন আর ওকে পড়াতেন রাতের বেলা। যে কথা তপনদা আজকে অকপটে বলে গেলেন, আসাদ তো এমনভাবে কোনদিন কাউকে বলতে পারে নি তার ভেতরের কথাগুলা। পড়ানোর সময় কতদিন এমন গেছে হাফিজুর রহমানের বিকৃত সমকামী যৌনলালসার স্বীকার হতে হয়েছে ওকে। জোর করে ভুলে যেতে চেয়েছে আসাদ, কিন্তু আজকে আবার সেই পুরানো ক্ষোভ জেগে উঠল। মনের অজান্তেই মটর সাইকেলের স্পিড বাড়িয়ে দিল। দাঁতে দাঁত চেপে ধরে নিজেই নিজেকে বলে উঠলো, ‘এবার আমার পালা তপনদা। এবার আমার পালা’।
০১ ফেব্রুয়ারী - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৭৪ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪